পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ০২, ২০১২

কম্পিউটার ও এর কাজ করার বৈশিষ্ট্য

কম্পিউটার ও এর কাজ করার বৈশিষ্ট্য
কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল যে, এই যন্ত্রটি প্রোগ্রামযোগ্য। একে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে সে নির্দেস অনুসারে কাজ করে ও ফলাফল প্রদান করে। আমরা এক সময়ে গাণিতিক সংখ্যাকে ক্যালকুলেটর প্রদান করে তার ফলাফল (যেমন যোগ বিয়োগ গুন ভাগ)বের করতাম। ক্যালকুলেটরের চেয়েও বড় হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করার জন্য কম্পিউটার যন্ত্রের ব্যবহার হতে শুরু করে। তবে এখন কম্পিউটার কেবল অঙ্কের হিসেব করে না। এই যন্ত্র সকল তথ্য উপাত্তকেই প্রক্রিয়া করে। কম্পিউটারের আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল যে, এই যন্ত্রটি বহুমুখী কাজের, বহু কাজ একসাথে করার এবং অনেক যন্ত্রের একক কবকল্প হিসেবে কাজ করে। দিনে দিনে এটি আর কেবল যন্ত্র থাকছে না, এটি হচ্ছে প্রযুক্তি, যা অনেক যন্ত্র বা প্রযুক্তির অংশ হচ্ছে। ক্রমশ এটি হয়ে উঠেছে অপরিহার্য এক টেকনোলজি।
এই যন্ত্রটির কাজ করার প্রধান ৩টি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঃ ক) দ্রুত গতিতে কাজ করা, খ) নির্ভূলভাবে কাজ করা এবং গ) স্মৃতিতে কাজ জমা রেখে পরবর্তীতে সেই কাজ ব্যবহার করা বা জমা রাখা অসমাপ্ত কাজ পরবর্তীতে সমাপ্ত করা।
ক. দ্রুত গতিতে কাজ করা ঃ একটি অঙ্ক বা হিসেবের কাজ যদি বড় এবং জটিল হয়, তাহলে মানুষের পক্ষে হাতেকলমে এ রকম একটি অঙ্ক বা হিসেবের কাজ করতে কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। এ ধরনের একটি অঙ্ক বা হিসেবের কাজ কম্পিউটার এক সেকেন্ডের এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে করে দিতে পারে।
আমরা সময়ের হিসাব করি সেকেন্ড, মিনিট এবং ঘন্টার এককে। কিন্তু কম্পিউটার এত দ্রুত কাজ করতে পারে যে শুধু সেকেন্ড হিসেবে এর গতি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কম্পিউটার একটি কাজ এক সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে করতে পারে।
সেকেন্ডর ক্ষুদ্রতম এককগুলো হচ্ছে নিম্নরুপ-
১ মিলি সেকেন্ড = ১ সেকেন্ডের এক হাজার ভাগের এক ভাগ।
১ মাইক্রো সেকেন্ড = ১ সেকেন্ডের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ।
১ ন্যানো সেকেন্ড = ১ সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের এক ভাগ।
১ পিকো সেকেন্ড =  ১ সেকেন্ডের একলক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগ।
খ. নির্ভূলভাবে কাজ করা ঃ কম্পিউটার কাজ করে তার ব্যবহারকারীর দেওয়া তথ্য, উপাত্ত এবং নির্দেশের ভিত্তিতে। ব্যবহারকারীর  দেওয়া তথ্য, উপাত্ত এং নির্দেশ সঠিক হলে কম্পিউটার নির্ভূল ফলপ্রদান করবে। ব্যবহারকারী ভূল তথ্য প্রদান করলে কম্পিউটার সঠিক ফল দেবেনা। যেমন- ব্যবহারকারী ৬ কে ২ দিয়ে গুন করার নির্দেশ না দিয়ে ভূলক্রমে ভাগ করার নির্দেশ দিল। এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার ৬ কে ২ দিয়ে ভাগ কর েফল দেখাবে ৩। এ ভুলের জন্য ব্যবহারকারী নিজেই দায়ী। কম্পিউটার কোনো প্রকার যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকলে এবং ব্যবহারকারী দেওয়া তথ্য, উপাত্ত এবং নির্দেশ সঠিক হলে কম্পিউটার অবশ্যই নির্ভূল ফল প্রদান করবে।
গ. স্মৃতি ঃ কম্পিউটার ছাড়া অন্যান্য কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রে সীমিত স্মৃতি থাকে। কিন্তু কম্পিউটারের স্মৃতির ধারণ ক্ষমতার সঙ্গে এ সব ইলেকট্রনিক যন্ত্রের স্মৃতির তুলনা করা যায়না। কম্পিউটারের সহায়ক স্মৃতিতে বিপুল পরিমান তথ্য ধারণ করে রাখা যায়। বিপুল পরিমাণ লেখালেখির কাজ, হিসেব-নিকেশের কাজ শব্দ ও ছবি, চলমান চিত্র বা ভিড়িও, কার্টুন েইত্যাদি কম্পিউটারের স্মৃতিতে ধারণ করে রাখা যায় বা জমা করে রাখা যায়। পরবর্তীতে সময়ে প্রযোজন অনুযায়ী স্মৃতিতে জমা করে রাখা এ সব বিষয় ব্যবহার করা যায়। স্মৃতিতে ধারন করে রাখা কোনো অসমাপ্ত কাজ পরবর্তীতে স্মৃতি থেকে তুলে এনে সমাপ্ত করে আবার স্মৃতিতে রেখে দেওয়া যায়। কম্পিউটারের সঙ্গে স্মৃতি শক্তি যুক্ত হওয়ার পর অন্যান্য ইলেকটুনিক যন্ত্র থেকে কম্পিউটার বিশেষভাবে গুরুত্ব লাভ করে এবং মানুষের ব্যবহারিক জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠতে থাকে।
নির্বোধ যন্ত্র ঃ কম্পিউটার অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে অনেক বড় এবং জটিল হিসেব নিকেশের কাজ নির্ভূলভাবে করতে পারলেও কম্পিউটারের নিজের কিন্তু কোনো বুদ্ধি নেই। কম্পিউটার নিজে বুদ্ধি খাটিয়ে কোনো কাজ করতে পারেনা। মানুষের তৈরি করে দেওয়া নির্দেশমালা অনুসরণ করেই কম্পিউটার সবরকমের কাজ সম্পন্ন করে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া নির্দেশমালার অতিরিক্ত একটি কাজও কম্পিউটার নিজের বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে করতে পারেনা। কম্পিউটারের কিছু কিছু কাজ দেখ মনে হতে পারে এ সব কম্পিউটার নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে করেছে। কিন্তু মোটও না। যে সকল কাজ দেখে কম্পিউটারকে বুদ্ধিমান মনে হয় সেসব কাজের নির্দেশমালাও আসলে মানুষের তৈরি করে দেওয়া। একই রকম কাজ একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিলেই কম্পিউটার আর করতে পারবে না। কারণ, মানুষের তৈরি করে দেওয়া যে সকল নির্দেশমালার ভিত্তিতে কাজ করে সে সব নির্দেশমালা কম্পিউটারের স্মৃতিতে জমা থাকে। স্মৃতিতে জমা থাকা নির্দেশমালা র সঙ্গে মিল খুঁজে না পেলে কম্পিউটার কোনো তথ্য নিয়ে কাজ করতে পারেনা। কাজেই, অনেক গুণে গুণী হওয়া সত্ত্বেও কম্পিউটার অন্যান্য যন্ত্রের মতোই নির্বোধ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন